চলচ্চিত্রচঞ্চরী – সিনেমা রিভিউ

অভ্র পাল – রান বেবি রান

3 মিনিট

সিনেমা – রান বেবি রান, মূল সিনেমা তামিল

পরিচালক – জিয়েন কৃষ্ণকুমার

অভিনয় – আরজে বালাজি, ঐশ্বর্য রাজেশ

ওটিটি প্লাটফর্ম – হটস্টার


বেশ কিছুদিন অসুস্থ হয়ে বসে আছি। বছরটা ভালো যাচ্ছে না – চার মাসের মধ্যে দুবার হসপিটাল যেতে হয়েছে। কি আর করা যাবে – শরীরের নাম মহাশয়, যা সওয়াবে তাই সয়।

মাঝে মাঝে কোন কারণ ছাড়াই সিনেমা দেখতে বসে যাই। আর সিনেমা খুঁজে নেওয়ার সময় ছকের বাইরে কিছু পেতে ইচ্ছে করে, তাই নামটা শুনে একটু হাস্যকর মনে হলেও, একরকম হঠাত করেই দেখে ফেললাম ‘রান বেবি রান’। দেখতে দেখতে কিছু কথা মনে হল – তাই এই লেখা। দক্ষিণ ভারতীয় সিনেমায় বেশ কিছু নির্মেদ থ্রিলার তৈরি হচ্ছে, তার সাথে পরিচিত হওয়া শুরু করেছি কয়েক বছর হল। বিশেষত দৃশ্যম বা রতসাসন যারা দেখেছেন, তারা হয়তো আমার সাথে একমত হবেন।

দক্ষিণী সিনেমায় একটা বিশেষ ধারা আছে – যেটা আমার অন্তত একটু বাধো বাধো ঠেকে সিনেমা দেখার সময়, তার তা হল খুব দ্রুত চিত্রনাটের বদল। যে দৃশ্যটা আরেকটু দীর্ঘস্থায়ী হওয়ার দরকার ছিল, তা যেন হঠাতই বদলে যায়। এই বিষয়টা হয়তো ওখানকার দর্শক ভালোভাবেই গ্রহণ করেন, কিন্তু আমার কাছে রসভঙ্গ হয়ে যায়। তাই কিছু অংশ ভালো লাগলেও গোটা সিনেমাটা সেভাবে মনগ্রাহী হয় না। এই সিনেমাটি কিন্তু সেই দোষে দুষ্ট একেবারেই নয়। আর যে কথাটা না বললেই নয়, তা হল এই যে – সিনেমায় অতিনাটকীয় ব্যাপারগুলো যেমন এককালে খুব দৃষ্টিকটু রকমের চোখে লাগত, এখন কিন্তু অনেক নতুন পরিচালক সেই ধারার বাইরে চলতে চেষ্টা করছেন। সিনেমার শট খুব সাধারন, কোনও লার্জার দ্যান লাইফ চরিত্র নেই। এই বিষয়টা নতুন ধরনের অল্প বাজেটের বেশ কিছু সিনেমা বা ওয়েব সিরিজে চোখে পড়েছে – সেটার তারিফ করতেই হয়। পরিচালক বেশ নতুন – ওনার অন্য কোনও কাজ আমি আগে দেখিনি। তাই বলতে অস্বীকার করে লাভ নেই – নতুন ধারার সিনেমা হিসেবে আমার বেশ ভালোই লেগেছে।

এক ঝলক দেখে নেওয়া যাক ট্রেলারটা।

যাদের দৃশ্যম ভালো লেগেছে, তাদের বলি যে এই সিনেমায় অনেকটা মিল পাবেন। দৃশ্যমে যেরকম একটি ঘটনাকে মুছে ফেলার জন্য প্রতি মুহূর্তে যেমন উত্তেজনার পারদ জমতে থাকে, এখানে গল্প তেমন রহস্যের জট ছাড়ানোর দিকে চলতে থাকে – প্রতিটি দৃশ্যে মিশে থাকে রহস্যের একটা অচেনা হাতছানি। গতির জন্য সিনেম্যাটোগ্রাফির তারিফ না করে পারছি না। গোটা সিনেমাটিই তৈরি হয়েছে বেশ নির্মেদভাবে। শুরুতেই একটি মেয়ে নায়কের গাড়িতে লুকিয়ে উঠে পড়ে এবং কোনও অজানা কারনে সে তার সঙ্গ ছাড়তে চায় না। মেয়েটি মারা যায় কোনও অদৃশ্য কারণে এবং তার মৃতদেহ লুকিয়ে ফেলা নিয়ে রহস্য জটিল হতে শুরু করে। নায়কের ভূমিকায় বালাজি বেশ সপ্রতিভ। সহ অভিনেতা কেউ খারাপ অভিনয় করেছেন বলব না – সকলে একটা আবহের সাথে সুন্দর মানিয়ে নিয়েছেন নিজেদের। আজকাল হিন্দি সিনেমায় এই বিষয়টা চোখেই পড়ে না।

আমি বরাবরই থ্রিলারের পোকা – কিন্তু আজকাল অনেক থ্রিলার দেখে বজ্র আঁটুনি ফস্কা গেরো মনে হয় বারবারই। সিনেমার জট পাকাতে পাকাতে পরিচালক এতটাই ব্যস্ত হয়ে পড়েন যে ক্লাইম্যাক্সের দিকে অতটা নজর থাকে না। এখানেও এই ভুলটা কিছুটা হলেও চোখে পড়ার মত। অভিনয় এবং চিত্রনাট্যের সাফল্য একটু হলেও ঢিলে হয়েছে। বেশ কিছু হিন্দি থ্রিলার দেখতে গিয়ে শেষে মনে হয় এত কিছু কেবল এই জন্য? আসল কথাটা হচ্ছে দর্শক হিসেবে আজকের দুনিয়ায় অঢেল কনটেন্ট। এর মধ্যে এতটুকু বৈচিত্র এবং অন্য স্বাদের সন্ধানে তৈরি হচ্ছে সিনেমা। ভারতীয় সিনেমা আস্তে আস্তে হলেও ভাঙছে ওটিটি দর্শকের দিকে তাকিয়ে। পৃথিবীর যে কোনও প্রান্তে ছড়িয়ে থাকা দর্শকের কাছে পৌঁছে যাচ্ছে। সেটাই বা কম কিসে।

ভালো থাকুন। ধন্যবাদ সবাইকে।

One thought on “চলচ্চিত্রচঞ্চরী – সিনেমা রিভিউ

Add yours

মন্তব্য করুন

Fill in your details below or click an icon to log in:

WordPress.com Logo

You are commenting using your WordPress.com account. Log Out /  পরিবর্তন )

Facebook photo

You are commenting using your Facebook account. Log Out /  পরিবর্তন )

Connecting to %s

Blog at WordPress.com.

Up ↑

%d bloggers like this: