সি ফর চুলকুনি

লিখছেন মনিপর্ণা সেনগুপ্ত মজুমদার

লেখাটি শুনতে পারেন অডিও স্টোরি হিসেবেও

বাঙালির কিছু কিছু সহজাত প্রবৃত্তি আছে- এই যেমন, কাঠি করা, বাঁশ দেওয়া, কাঁকড়াপনা এবং চুলকুনি। না, এ চুলকুনি শ্রাবন্তীর মিষ্টি সুরের স্যালিকল জনিত চুলকুনি নয়, সানি লিওনের কোমল ত্বকের চুলকুনিও নয়- এ হল আদি এবং অকৃত্রিম কুচো ক্রিমি টাইপ চুলকুনি। মানে, এমনি দিব্যি থাকে কিন্তু কখন যে কী কারণে চিড়বিড়িয়ে উঠে চুলকাতে বাধ্য করবে তা কেউ জানেনা। মানে ধরুন আপনার প্রতিবেশী ক’ বাবুর নতুন কেনা শেভ্রলে দেখে হঠাৎ আপনার পশ্চাৎ দেশে সুড়সুড়ি জাগতেই পারে এবং আপনি মাথা নেড়ে নেড়ে সকালে বাজারে গিয়ে বলতেই পারেন, ” সব ঘুষের পয়সা মশাই, তার ওপর ক’ বাবুর ধিঙ্গি মেয়েটা (গলা নামিয়ে) কোথায় কি করে বেড়ায় কে জানে…”, এবং এই বাক্যটি আপনার মুখ থেকে নির্গত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই সেই অদৃশ্য চুলকুনিতে যেন ঊর্বশীর নরম হাতের ছোঁয়া লাগে! আহা! কী আরাম!

চুলকুনি নানা ধরণের হয়। কোন কোন সময় সামান্য হিংসা এবং অনেকটা আফশোষ মিলে তৈরি হয় একরকমের হতাশামিশ্রিত চুলকানি। সহকর্মীর সুন্দরী বৌ এবং ততোধিক ন্যাকা টাইপ শ্যালিকাকে দেখে এই চুলকুনি চুলবুলিয়ে উঠতে পারে। কিছুই করার নেই, শ্যালিকা পয়দা করা সম্ভব নয় আর বৌ- সে যতই সুন্দরী হোক না ক্যানো আফটার অল, নিজের বৌ… ডাল আর মুরগী তে কিছু তফাত তো থাকবেই বস্‌। তবে এই ধরণের চুলকুনি বেশ নিরীহ। সাধারণতঃ কারো ক্ষতি করেনা এবং কিছুদিন পরে মিলিয়ে যায়।

৪০% ইন্টেলু, ২০%গর্ব, ২০% হাম ক্যা নেহি জানতা, এবং ২০% ছোঃ, বাকিরা কিস্যু জানেনা মিশিয়ে এক বিকটরকম চুলকুনি হয়। এটার প্রধান সমস্যা হল, যে একা একা চুলকিয়ে মজা পাওয়া যায়না… জনগণ কে দেখিয়ে দেখিয়ে, মুখ ব্যাদান করে সমস্ত শিষ্টাচার বিসর্জন দিয়ে প্রতিটি ব্যাপারে নিজস্ব জ্ঞানভান্ডার উপুড় করে চুলকানোতেই আনন্দ। এই রোগীদের প্রধানতঃ দ্যাখা যায় সোশ্যাল নেটওার্কিং সাইটে, ভার্চুয়াল সমাজে এই রোগকে ভাইরাল করে তুলতে এনাদের অবদান অসামান্য।

কিছু টিপিক্যাল মেয়েলী চুলকানিও আছে।

-এই, শুনেছিস ত মিসেস মিত্র’র ব্যাপারটা…অত সুন্দরী, লেখাপড়াতেও শুনেছি দারুণ কিন্তু কপালটা দ্যাখ…সেদিন দেখি ওর বরটা একটা সেক্সি ড্রেস পরা মেয়ের সঙ্গে মলে ঢুকছে। ওঃ সো স্যাড! আই রিয়্যালি পিটি হার।

বেচারি মিসেস মিত্র এবং তার বর ঘুণাক্ষরেও বোঝেনি যে তাদের সুখী বিবাহিত জীবন অজান্তেই কারো কারো মনে কী ভয়ানক ঈর্ষামূলক চুলকানির সৃষ্টি করেছে!

অবশ্য, পেটরোগা বাঙালির ত এই চুলকুনিই সম্বল। আঁতলামি, অম্বল, ঘেমো গন্ধ, আই-পি-এল,শারুক্ষান, বইমেলা, মাঙ্কি ক্যাপ এবং মাঝে মাঝে পিলপিলিয়ে ওঠা এই প্রদাহ- এই নিয়েই আমরা দিব্যি আছি। খুব ভালবাসা ভেব্‌লে উঠলে মাঝে মাঝে হাত বাড়িয়ে অন্যকেও চুলকাতে সাহায্য করি। আফ্‌টার অল, সেই যে ব্যাদবাক্য, বাঙালিকে বাঙালি না দেখিলে কে দেখিবে।


মন্তব্য করুন

Fill in your details below or click an icon to log in:

WordPress.com Logo

You are commenting using your WordPress.com account. Log Out /  পরিবর্তন )

Facebook photo

You are commenting using your Facebook account. Log Out /  পরিবর্তন )

Connecting to %s

Blog at WordPress.com.

Up ↑

%d bloggers like this: