আমার ডাক্তারি

-’কি বলবো ডাক্তারবাবু, আমার বড় বিপদ। আপনার নাম শুনে অনেকদূর থেকে আসা, এখন আপনিই ভরসা। দেখুন যদি কিছু করতে পারেন। কত ডাক্তার, কত কবিরাজ দেখিয়েছি। কত সাধু-সন্ত, বাবাজীর মাদুলি-কবচ পরেছি। কিছুতেই ঠিক হবার নাম নেই।

আমার বড়দিন

- "তোমাদের দেশে অমৃত পাওয়া যেত না? সমুদ্র তো অনেক ছিল, মন্থন করতে পারোনি! জানো,  আমাদের দেশে ঈশ্বর কেন কত অসুরেরও মৃত্যু হয় না, রক্তবীজের এক ফোঁটা রক্তে আরও একশটা রক্তবীজ জন্মায়। পেরেক ঠুকে ঠুকে তোমার শরীর থেকে ওরা এত রক্ত বার করে দিল তার থেকে আর একটা যীশু জন্মাল না! দেখো তোমার মায়ের কত কষ্ট।"  

বাবার ডায়েরি 

কতদিন বাদে বাবা আর আমি মুখোমুখি! বাইরে তখন দক্ষিণের মৃদুমন্দ হাওয়া বইছে, তেরচা হয়ে ঘরের কার্নিশ থেকে ঢুকে আসছে একফালি রোদ আর গেটের সামনে পরিজনের মত দাঁড়িয়ে থাকা মায়ের লাগানো জুঁইফুলের গাছে ফোটা জুঁইফুলের গন্ধ চুঁইয়ে পড়ছে সারা বাড়িতে। আমি সুযোগ পেয়ে অনুযোগের সুরে বলি -  "আবার রজতেশ কেন? ওটা তো আমার অফিসিয়াল নেম।

গুড় -পাটালি

কথায় বলে সমুদ্র কিছুই লহে না, সমস্তই ফিরাইয়া দেয়। বঙ্গভঙ্গের সমুদ্র তরঙ্গের পুনরাঘাতে তাহাদিগের পিতাকে পশ্চিমের এই পারে ফিরাইয়া দিল বটে, কিন্তু সে অনেক পরে। ততদিনে তাহাদিগের জীবন সংগ্রামের কেঁচেগণ্ডূষ হইয়াছে। একটি অসহায়া নারী ও তাঁহার চারিটি ক্ষুদ্র শিশু।  

মড়ার জিনিস ছোঁয়া মানা

মাঝরাতে রতনের কীরকম যেন অস্বস্তি হতে লাগল। মনে হতে লাগল লেপটা যেন ওকে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরেছে। এই ঠান্ডায় লেপটা যে ফেলে দেবে তাও পারল না। ভাবল বড়লোকের জিনিস গায়ে দেওয়ার অভ্যাস নেই, তাই এমন হচ্ছে। 

ফেরা

“ভালবাসা আসলে একটা প্রতিশ্রুতি, তন্ময়। যেটা দুজন মানুষ পরস্পরকে করে। আমাদের ক্ষেত্রে সমস্যাটা হচ্ছে – তুই নিজের মানুষের জীবনটাকেই অস্বীকার করে যাচ্ছিস, দৈনিক। আমার কাছে সিনেমা অমৃতের মতো ছিল। সেই অমৃত ভর্তি গ্লাসে চুমুক দিতে বলেছিলাম তোকে। বুঝিনি, যে সেটা তোর কাছে নার্কোটিক হয়ে দাঁড়াবে। তুই স্বেচ্ছায় মানুষ থেকে জড় পদার্থ হয়ে বাঁচতে চাস। জড় পদার্থের কাছে প্রতিশ্রুতি দেওয়া যায় না। আমিও দেব না আর।

তিন সত্যি

হঠাৎ আনমনেই তাকালেন পিছনের ঝাউবনের দিকে। সূর্যের শেষ আলো গায়ে লেগেছে গাছগুলোর। যেন সত্যি সত্যি অনেকগুলো মানুষ সার দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে, আর সমুদ্রের হাওয়া খাচ্ছে। অনিলাভর মনে হয়, আচ্ছা সত্যি যদি মৃত্যুর পরে মানুষ এরকম গাছ হয়ে যায়!

মধুমুরলী

একটা পুকুরের নাম মধুমুরলী? তাও আবার পলাশীর যুদ্ধেরও একশো বছর আগেকার? অবাক হয়েছিল প্রান্তর। একটা ফুডওয়াকে এসে জনা কুড়ি মানুষ তখন একত্রিত হয়েছিল ওই পুকুরের সামনে। সোশাল মিডিয়ার একটা জনপ্রিয় খাদ্যপ্রেমীদের গ্রুপ আয়োজন করেছিল এই ফুডওয়াক। বারাসাতের প্রাচীন ঐতিহাসিক স্থানগুলো দেখা ও সেইসঙ্গে আড্ডা, আলাপ পর্ব আর দেদার খাওয়া দাওয়া। প্রান্তর ওই গ্রুপ মিট এ গিয়েছিল কারণ আজকাল তার পুরনো লেখালেখির ভূতটা আবার মাথাচাড়া দিয়েছে।

লটারি

"তুমি আবার শুরু করেছ?"  ঘড়িতে সবে আটটা সতের। চায়ের কাপটাতে মেজাজি চুমুক বসিয়ে খবরের কাগজখানা ওল্টানো শুরু করেছিলেন অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মচারি শ্রী নীলকন্ঠ ব্যানার্জি, ওরফে নীলুবাবু। এমন সময় পাকানো বলের মতো কিছু একটা জিনিস ঠকাস করে তার কোলের ওপর এসে পড়ায়, এমন চমকে উঠলেন যে আরেকটু হলেই গরম চা চলকে একসা হতো। চোখ তুলে দেখেন... Continue Reading →

আলো

সকালে অফিস যাওয়ার তাড়া। ঘুম থেকে ওঠার পর কয়েক ঘন্টা সময়, ঝড়ের মত বাথরুম, রান্নাঘর, শোয়ার ঘরে দাপাদাপি করে একসময় ফ্ল্যাটের সিঁড়ি বেয়ে দুদ্দাড় করে নেমে, কাঁধে অফিসব্যাগ ঝুলিয়ে বেরিয়ে পড়ে। তারপর অনেক সন্ধ্যায় আবার ফিরে আসা। এসে পশ্চিমের জানলায় এক কাপ চায়ের মেয়াদ হাতে বসা। বন্ধ বাড়িটার পায়ের কাছে প্রদীপটা আবার জ্বলে ওঠে। অম্লান বসে ভাবতে থাকে, কে জ্বালাল?

মানুষ হওয়া

স্বামীজি দৃপ্ত পায়ে হেঁটে যাচ্ছেন। সঙ্গে সামান্য একটা লাঠি আর একটা ঝোলা। গাছের পাতার ফাঁক দিয়ে প্রথম সূর্যের আলো এসে ওঁর দেহ, মুখ আর গেরুয়া বসন সোনার রঙে মাখিয়ে দিচ্ছে। যেন আগুনের গোলা চলে যাচ্ছে লাল মাটি বেয়ে। যেন এই পৃথিবীর কেউ নন তিনি। এক কাজ শেষ, অন্য কাজ শুরু করতে যাচ্ছেন।

পৃষ্ঠা: 1 2

ভুনি ও কইমাছেরা

বাংলা ডিজিটাল প্লাটফর্ম 'ও কলকাতা'য় পূর্বপ্রকাশিত গল্প 'ভুনি ও কইমাছেরা' এখন অডিও স্টোরি হিসেবেও প্রকাশিত হল। গল্পটি পড়তে ও শুনতে দুইই পারবেন এই লিংক থেকে।

Blog at WordPress.com.

Up ↑